এনবিআরের চিঠি প্রত্যাহারের খবরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার, লেনদেন কিছুটা বেড়েছে
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার ইঙ্গিত মিলছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে পুঁজিবাজার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে তেজিভাব লক্ষ করা গেছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল লুটপাট হওয়া পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
গত এক বছরে সরকারের সদিচ্ছা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজার থেকে হারানো আস্থা ফিরতে কিছুটা হলেও শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাজারে যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছিল, সেটা স্বস্তিকর অবস্থায় আসছিল।
তবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় সেপ্টেম্বরের শুরুতেও সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে থেকে ডিএসই অযোচিত হস্তক্ষেপে বাজার টালমাতাল শুরু হয়। এ অবস্থার রেশ কাটতে না কাটতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঠানো এক চিঠি নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি বাজারে স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা পুরোদমে লেনদেন শুরু করেছিলেন এবং অনেকেই লোকসান কাটিয়ে মুনাফা তুলতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছে একটি বিতর্কিত চিঠি ইস্যু হয়। ওই চিঠিকে কেন্দ্র করে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন থেকে বিরত হতে শুরু করেন এবং টানা পতনের কবলে পড়ে যায় পুঁজিবাজার।
তবে স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এনবিআর তাদের সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। ফলে বাজারে আবারও ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করছে। যার ফলে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন উভয়ই বাড়তে শুরু করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। তবে সূচকের উত্থানের বাজারে জুন ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে ডিভিডেন্ড ঘোষনাকে সামনে রেখে জুন ক্লোজিং কোম্পানির বিভিন্ন খাতের শেয়ারের প্রতি একটু বাড়তি আগ্রহ দেখা গেছে। এছাড়া আর্থিক বছর সম্পন্ন হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে শেয়ারহোল্ডারা।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৯২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯১ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৮৯ টির, দর কমেছে ৬০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮ টির। ডিএসইতে ৫৭৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১০৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৩ টির এবং ১১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

