পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান হলেও লেনদেনের ভাটার রহস্য কী

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দিন যত যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন খরা তত প্রকট হয় উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর আগে গত ২৫ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
মুলত বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট থাকায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ায় লেনদেনে ভাটা পড়েছে। তবে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠলেও টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে এসেছে পুঁজিবাজার। ডিএসই’র পাশাপাশি অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) লেনদেনের অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর টানা দুই কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়লো।
এদিকে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইতে ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে আবার নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক মাস ধরে চলা দরপতনের সঙ্গে এখন পুঁজিবাজারে লেনদেন খরাও প্রকট হয়ে উঠছে।
বর্তমান সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২২ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্ট হয়। তিনদিনের মাথায় সেই রেকর্ড ভেঙে ২৫ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এখন সেই রেকর্ড ভেঙে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনবার ডিএসইতে ২৫০ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
এর আগে গত ২৫ মে ডিএসইতে ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার লেনদেন হয়। তারপর গত ২৯ মে ডিএসইতে ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে টানা ১৪ কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেনের ঘটনা ঘটলো।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচক বাড়লেও কমেছে টাকার পরিমানে লেনদেন। তবে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০২ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৩ টির, দর কমেছে ১১২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৭ টির। ডিএসইতে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১১৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৬৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬৩ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।