পুঁজিবাজারে চলছে দরপতনের উৎসব, ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে পুঁজিবাজার। এতে ঋণগ্রস্ত বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ে নি:স্ব হয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসের ১৫ বছর অতিক্রম করলেও এখনও একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার ফিরে পায়নি বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু এখনও এ ধসের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। ফলে এক যুগের বেশি আগের ধসের ক্ষত এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বরং দিনের পর দিন আশার বানী শুনাচ্ছেন পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকরা। তবে কোন আশায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরে পাচ্ছে না। এতে অনেকটা নীরবে পুঁজি হারিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা।
টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ছেড়েছেন এই বাজার। লেনদেন কমায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। নতুন কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসে সৃষ্ট সংকটকালের পর গত ১৫ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে নাজুক দশা পুঁজিবাজারের।
এদিকে টানা দরপতনের বৃত্তের মধ্য থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজার ততই তলানিতে নামছে। সেই সঙ্গে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। কীভাবে বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষা করবেন সেই উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। এতে পুঁজি হারা বিনিয়োগকারীদের বোবা কান্না কিছুতেই থামছে না।
যার ফলে অব্যাহত দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতিও কমে গেছে। এছাড়া কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদ। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে হচ্ছে নিঃস্ব।
টানা দরপতনে বাজার নিয়ে অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। দরপতনের সাথে সাথে কমে গেছে লেনদেনের পরিমাণ। এমন টানা দরপতনের প্রভাব পরছে দেশের অর্থনীতিতে। তবে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সংস্কার মূলক উদ্যোগের ফলে অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা গেলেও পুঁজিবাজার যেন তার উল্টো পথে। যার জন্য পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিনদিন আরো কমে যাচ্ছে। গত ৯ মাসে পুঁজিবাজারে এমন ভাবে দরপতনে যেন বিনিয়োগকারীদের উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে।
গনঅভ্যুন্থানে সরকার পতনের পর তদারকি সংস্থাসহ সব খাতেই সংস্কার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস দেশের পুঁজিবাজার ছিল চাঙ্গা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা তাদের রঙ্গীন স্বপ্ন দেখছিলেন। তবে বেশি দিন আর তারা তাদের রঙ্গীন স্বপ্ন দেখতে পারে নাই।
কারণ চার কার্যদিবসের পর থেকেই টানা দরপতনের বৃত্তের মধ্য আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। এইদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) পুঁজিবাজারকে সংস্কারের নামে আরো বেশি অস্থিশীল করে ফেলছে। প্রতিদিন যেই হারে সূচকের দরপতন হচ্ছে তা দেখে মনে হয় না পুঁজিবাজারকে বেশি দিন বাচিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯২ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩ টির, দর কমেছে ২৩৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭২ টির। ডিএসইতে ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৭ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৪ টির এবং ৩৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।