স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, পুঁজিবাজারে আর দুর্নীতি-অনিয়ম চলবে না।তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং বৈষম্য দূর করা হবে। বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির তদন্ত করা হবে।

বিএসইসির পরিকল্পনা তুলে ধরতে রোববার (২৫ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। এই সময় বিএসইসির কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও মোহসীন চৌধুরী উপস্থিতি ছিলেন।

বিএসইসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটি মিশন নিয়ে এখানে (বিএসইসি) এসেছি। বিগত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলো নিয়ে ইমিডিয়েটলি ইনডেপ্ত রিভিউ করতে হবে। লুফলসগুলো বন্ধ করতে হবে। লুফলসগুলো বন্ধ করতে না পারলে আবার ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে মার্কেটের গভর্ন্যান্স ফেরানো। গভর্ন্যান্স এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা, যেটা থেকে আমরা অনেক বছর ধরে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে অনেক দূরে চলে গেছি।

তিনি বলেন, ১৪ বছর ধরে আমাদের যে অনিয়ম সেটা কি আমরা খুব সহজে সরাতে পারব? এটা ১৪ মাসেও করা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। তবে ফোকাসসহ এবং রেজুলেশনসহ যদি লেগে থাকি তাহলে হয় তো আমরা খুব শিগগির একটা কমফোর্টেবল জায়গায় পৌঁছাতে পারবো। হয় তো আমরা যে জায়গায় যেতে চাচ্ছি সেটা খুব সহসা হবে না, কিন্তু আমার আগের জায়গার কাছাকাছি আসতে পারবো।

বিএসইসির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দুটি স্ট্রিমে কাজ করবো। একটা কোর এবং অন্যটি নন কোর এরিয়া। কোর এরিয়াতে আমরা তিনটি প্রধান উপাদান নিয়ে কাজ করবো। সেই তিনটি উপাদানের প্রথমটি হচ্ছে স্বচ্ছতা আনতে হবে। বাজারে ম্যানিপুলেশন থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়গুলো এর আওতায় পড়ে।

আমরা যে স্বচ্ছতা আনবো সেখানে মেইন ফোকাস হবে আমরা কি কি জিনিস মনিটরিং করি, সেই মনিটরিংয়ের পদ্ধতিটা কি, আমরা কি সিস্টেম ইউজ করি, সেই সিস্টেমগুলোর এক্সসেস কার কাছে আছে, সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার অপব্যবহার হচ্ছে কি না সেগুলো দেখবো।

সাবেক এই ব্যাংকার বলেন, আমাদের দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে গর্ভনেন্স প্রতিষ্ঠা করা। এটা হলো বাজারের প্রাণ। গর্ভনেন্স ছাড়া কোনো কিছুই টেকসই হবে না। আমাদের তৃতীয় কাজ হচ্ছে মার্কেট ডেপ্ত নিয়ে কাজ করা। এটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। প্রথম দুইটি কাজ আমরা ইমিডিয়েট করবো।

তিনি বলেন, আমাদের বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতি ফোকাস করতে হবে। তবে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য কৃত্রিমভাবে না। মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই আনতে হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির গভর্ন্যান্সের ব্যাপারে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, কোম্পানির গভর্ন্যান্সের বিষয়ে আমরা শক্তভাবে কাজ করব। স্বাধীন পরিচালক নিয়ে কাজ করবো, যারা আছেন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখবো, কিছু কিছু কোম্পানিতে অনেক ভালো লোক আছেন এবং কিছু কিছু কোম্পানিতে গ্যাপও আছে, স্বাধীন পরিচালক বিনিয়োগকারীদের ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করবেন। এজন্য এখানে মনিটরিংটা ভালোভাবে করতে হবে।

কিছু কিছু কোম্পানি অতি দলীয়করণের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের কারসাজি করেছে, এই কোম্পানিগুলো নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা রযেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দলীয় বিষয়টি বিবেচনায় নেবো না। আমরা দেখবো কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না। কি কি অনিয়ম হয়েছে, সেটা ধরে আমাদের যেতে হবে।

দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার রাখা হয়েছে ১০ শতাংশ, বিপরীতে দাম কমার ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উত্তরে বিএসইসির কর্মকর্তারা বলেন, পুঁজিবাজারের সব জায়গা থেকে বৈষম্য দূর করবো। কোথাও বৈষম্য থাকবে না।