শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১৭ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ঔষুধ এবং রসায়ন খাতের সমস্যাগ্রস্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে কিনে নেয়ার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল আলিফ গ্রুপ। তবে পরবর্তী সময়ে সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় গ্রুপটি। যদিও ওই খবরে তখন সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার দর অস্বাভাবিক তেজিভাব দেখা দিয়েছিল। আর ফায়দা লুটেছিল একটি স্বার্থান্বেষী মহল।

এবারও একই কায়দায় শেয়ারবাজারের আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে আলিফ গ্রুপের অধিগ্রহণ করার খবর বেরিয়েছে। গ্রুপটির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্ত এবারও খবরও সেন্ট্রাল ফার্মার মতো হবে না তো? মাঝখানে ফায়দা লুটে এ শ্বেতহস্তীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে না তো? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরফাক খাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

২০১৭ সালে আলিফ গ্রুপ সেন্ট্রাল ফার্মার সাথে চুক্তি করার পরও যেভাবে তাদের চুক্তি থেকে সরে এসেছে। কিন্তু চুক্তির খবরে কোম্পানিটির শেয়ার দর উঠেছিল ১৩ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়। চুক্তি বাতিলের খবরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ফের ১৫ টাকায় নেমে আসে। এতে বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ে যায়।

ঠিক একইভাবে আলিফ গ্রুপ সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহনের বিষয়টি বিনিয়োকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি অধিগ্রহণের খবরে ১.৫০ টাকার শেয়ার বেড়ে অবস্থান করছে ৭ টাকা ৭০ পয়সায়। এরই মধ্যে কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটি অধিগ্রহণে আবার আলিফ গ্রুপ থাকায় এর শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা ফের দুশ্চিন্তায় ভুগছে। কারণ একইভাবে যদি সেন্ট্রাল ফার্মার মতো বিনিয়োগকারীদের আবারও বড় ক্ষতির মুখে পড়ে যায়!

এর আগে বিডি অটোকারস ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে আলিফ গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হওয়ায় ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় আলিফ গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম, তার ছেলে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের স্ত্রী লুৎফন নেছা ইসলাম, আজিমুল ইসলামের স্ত্রী নাবিলা ইসলামসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলিফ টেক্সটাইল মিলস ও বায়তুল খামুরকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ গত বছর তারল্য সংকটে থাকা বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেডের (বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কিনে নেয়ার উদ্যোগ নেয় আলিফ গ্রুপ। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কাছ থেকে কোম্পানিটির ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়ার কথা জানায় আলিফ গ্রুপ। এজন্য আইসিবির সঙ্গে চুক্তিও করে গ্রুপটি। যদিও শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি আলোর মুখ দেখেনি। মূলত বিডি ওয়েল্ডিং জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি হওয়ায় এবং এর পর্ষদে আইসিবির মনোনীত পরিচালক থাকার কারণে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয় এবং এতে কমিশনের অনুমোদনও পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে আলিফ গ্রুপ ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলামের কার্যক্রমের বিষয়টি কমিশনের সক্রিয় নজরদারিতে থাকায় তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছিলো।

এমন একটি গ্রুপ আবারও সিএন্ডএ টেক্সটাইলের মতো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি শ্বেতহস্তীকে অধিগ্রহণ করছে। যে কোম্পানিটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এর যন্ত্রপাতি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতার দাবিতে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ-অনশন করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা দাবি মেটাতে পারেনি। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করছে আলোচিত আলিফ গ্রুপ। খবরটি একদিকে ভালো হলেও অন্যদিকে আতঙ্কের। এমনই মনোভাব ব্যক্ত করছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, আগের মতো এবারও যদি বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়, তাহলে এর দায় কে নেবে? যদিও বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের সার্থে গ্রুপটিকে অনেক শর্ত দিয়েছে। কিন্তু খবরটির কারণে বিনিয়োগকারীরা যদি ক্ষতির মুখে পড়ে যায়, তাহলে সেই ক্ষতি কী তারা পুঁষিয়ে নিতে পারবে? আগের মতো বিনিয়োগকারীরা পথে বসে গেলে তাদের কী হবে? গ্রুপটির হয়তো জরিমানা হবে, শাস্তি হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাবে কে?

আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ:

২০১০ সালে আলিফ গ্রুপ কোম্পানিটির শেয়ার কিনে এর মালিকানা নিয়েছিল। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের আগের নাম ছিল সজিব নিটওয়্যার। ২০১৫ সালে সজিব নিটওয়্যার গার্মেন্টস লিমিটেড থেকে নাম পরিবর্তন করে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ নামের অনুমোদন দেয় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

শেয়ারবাজারে অত্যন্ত দুর্বল কোম্পানি হিসেবে লেনদেন হওয়া এ কোম্পানিটি ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রায় সব আইনি শর্তাবলি ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল বাজারে ফিরে আসে। এর আগে প্রায় আট বছর ধরে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সাবেক সজিব নিটওয়্যার) মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত হয়ে ওটিসি মার্কেটে ছিল।

২০১৮ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১৪৩ টাকা দিয়ে মূল মার্কেটে লেনদেন শুরু করে। লেনদেনের শুরুর সপ্তাহে এক হাজার ৫১৫ টাকায় পৌঁছায় কোম্পানিটির শেয়ারদর।

আলিফ গ্রুপ কোম্পানিটির পরিচালনায় আসার পর নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। তবে বাজারে লেনদেন শুরুর কিছুদিন পর শেয়ারের দাম ক্রমাগত পতনে থাকে। এতে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

এদিকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করতে পারেনি। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশ পেলে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। যদিও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

২০২০ অর্থবছরের জুলাই ’২০ থেকে মার্চ ’২১ নয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ১ টাকা ৩৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিলো ২ টাকা ১৬ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৫৬ পয়সা।

সর্বশেষ শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ টাকা ৭০ পয়সায়।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন আছে ১৫০ কোটি টাকার এবং পরিশোধিত মূলধন আছে ৪৪ কোটি টাকার। ২০১৭ সালে নতুনভাবে তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনিন্ম ২১ টাকা ২০ পয়সায় এবং সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালে ৩১ শতাংশ বোনাস, ২০-১৭ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ২৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি তিন শতাংশ ক্যাশ এবং সাত শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিটির ডিভিডেন্ডের আগের ঝলক এখন যেন মন্দার কবলে পড়েছে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৫৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। গত এক মাসে কোম্পানিটির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ৩.১৭ শতাংশ।

আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং:

আলিফ গ্রুপের নিজেদের কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হলেও অন্য উদ্যোক্তার দুটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি কিনে নেয় তারা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সিএমসি কামালকে কিনে নেয় আলিফ গ্রুপ এবং নাম পরিবর্তন করে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড রাখা হয়। তখনও নানা প্রতিশ্রুতির ঝলক দেখায় গ্রুপটি। ফলে শেয়ারটির দরেও তেজিভাব ফিরে। এরপর শেয়ারটির দর ফের তলানিতে এসে ঠেকে। এখানেও বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির কবলে পড়ে।

২০২০ অর্থবছরের জুলাই ’২০ থেকে মার্ ’২১ নয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ৩৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিলো ৬৩ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৬৪ পয়সা।

সর্বশেষ শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সায়।
কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৫৯ কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনিন্ম ৬ টাকা ৬০ পয়সায় এবং সর্বোচ্চ ২১ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সায়।

কোম্পানিটি ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ ক্যাশ এবং ৮ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। তারও আগে ২০১৭ সালে ১১ শতাংশ ক্যাশ ও ২০১৬ সালে ১৩ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার আছে এর উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৫৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। গত এক মাসে কোম্পানিটির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.৪৪ শতাংশ।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহনে বিএসইসির সম্মতি:

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোস্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণের বিষয়ে আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সাতটি শর্ত সাপেক্ষে আলিফ গ্রুপকে এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলিফ গ্রুপ ও সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অধিগ্রহণ বিষয়ক সম্মতির চিঠি পাঠানোর বিষয়টি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ারনিউজকে নিশ্চিত করে।

বিএসইসির দেওয়া ৭ শর্তের মধ্যে রয়েছে: মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে সকল সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত কোম্পানি বা অধিগ্রহণকারী কোম্পানির আগত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নতুন শেয়ার ও বন্ড ইস্যু করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনের বিধি-বিধান পরিপালন করে আলিফ গ্রুপ তাদের প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ গ্রুপ অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। একইসঙ্গে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসের উৎপাদন সুবিধার জন্য গ্যাস লাইন, অন্যান্য সকল ইউটিলিটিগুলোর সংযোগ স্থানান্তর করতে হবে। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসকে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আলিফ গ্রুপকে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া আলিফ গ্রুপের কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংকে সিকিউরিটিজ আইন মেনে প্রক্রিয়াধীন থাকা এজিএম এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিয়মিত করতে হবে। সংগৃহীত শেয়ারের টাকা পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। ওই টাকা শুধুমাত্র ব্যাংকের দায়বদ্ধতা ও উৎপাদন সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসকে উৎপাদন শুরু করতে সকল উদ্যোগ এবং দায় গ্রহণ করবে আলিফ গ্রুপ।

সূত্রে জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে অবস্থিত কোম্পানিটি পরিদর্শন করেছে আলিফ গ্রুপ। তারা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত পরিকল্পনার প্রস্তাব বিএসইসিতে দাখিল করেছে।

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। একইসঙ্গে গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

এছাড়া, কোম্পানিটি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতেও ব্যর্থ হয়েছে। আর ২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকে টানা ৫ বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি। এখন পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না এবং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে কোম্পানিটি। ২০১৬ সালের পর থেকে কোম্পানিটির ব্যর্থতার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত।

২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসের পরিশোধিত মূলধন ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজারটি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬২.১৯ শতাংশ শেয়ার। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫.৬৭ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ২২.১৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।