শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। তা দেখে নতুন করে এই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীমা, প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের দামের তুলনায় সিমেন্ট খাতের কোম্পানির মুনাফা ভালো, শেয়ারের দামও কম। তাই ঝুঁকিমুক্তভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সিমেন্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসির সাবেক এমডি আরিফ খান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল শেয়ার কেনেন। কোম্পানির মুনাফা হবেই এমন তথ্য জেনে বিনিয়োগ করেন। এটা বাজারের জন্য পজিটিভ।

ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরে ৩০ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে এসব কোম্পানির সর্বনিম্ন দশমিক ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর তথ্য মতে, ৩০ এপ্রিল আরমিট সিমেন্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেখান থেকে প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ৩১ মে পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। ১৯৯৮ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার।

একইভাবে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে কনফিডেন্স সিমেন্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর আগের মাস অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ছিল ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শেয়ার। এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ৪ শতাংশ বেশি শেয়ার কিনেছেন। কোম্পানিটির মোট শেয়ার রয়েছে সাত কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৩১টি।

কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগের বছরও ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছি। ১৯৯৫ সালের তালিকাভুক্ত মেঘনা সিমেন্ট মিলসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এক মাস আগে যা ছিল ৩৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

২ কোটি ৭২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০টি শেয়ারধারীদের জন্য ২০২০ সালে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নগদ আর ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। এমআই সিমেন্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর আগে ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগের মাসে যা ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজারটি। ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। তবে একটু বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বহুজাতিক দুই কোম্পানি লাফার্জহোলসিম লিমিটেড এবং হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লিমিটেডের ক্ষেত্রে। দুটি কোম্পানির মধ্যে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের মোট ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯০টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ শেয়ার। এক মাস যা ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ সামান্য কমেছে।

একই চিত্র লাফার্জহোলসিমেও। বর্তমানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের মাসে ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০০৩ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারের সংখ্যা ১১৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০টি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণ। পণ্য বিক্রিতে বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধির হয়েছে। বিদায়ী প্রান্তিকে সবচেয়ে ভালো মুনাফা করেছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তিন মাসে পণ্য বিক্রিতে লাফার্জের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। তাতে প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে লাফার্জহোলসিমের দ্বিগুণ।

একই সময়ে অপর বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পণ্য বিক্রিতে বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। তাতে কোম্পানিটির প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর ফলে ২০১৯ সালে লোকসানে থাকা কোম্পানিটি ভালো মুনাফায় ফিরেছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে এমআই সিমেন্টের। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত ‍মুনাফা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩১ শতাংশ বেশি।

একই সময়ে কনফিডেন্স সিমেন্টের প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে ২৪৬ শতাংশ। ২৫ শতাংশ পণ্য বেশি বিক্রি হওয়া মেঘনা সিমেন্টের প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। এছাড়াও প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে ৭৬৬ শতাংশ। আর পাঁচ বছর পর মুনাফায় ফিরেছে আরামিট সিমেন্ট।