শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বীমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ ও বানোয়াট প্রসপেক্টাস ইস্যু করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পাঁয়তারা করছে বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে কোম্পানির প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে হিসেবে ভুল, কৌশলে বিনিয়োগকারীদের পকেট কাটা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত ফান্ড অপব্যবহারে জরিমানার কবলে পড়া ড্রাগণ সোয়েটার পরিচালকদের সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবার পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। মুলত পুঁজিবাজারের টাকা নিয়ে ব্যবসা করা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, বরং লুটপাট করা টার্গেট। এছাড়া বীমা কোম্পানিটিতে রয়েছে আইপিও ফান্ড প্রাপ্তির পরে ব্যবসায় নিম্নমূখী হওয়া গোল্ডেন হার্ভেষ্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রাজিব সামদানি। যে কোম্পানিটির জন্য ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে দুই দফায় অর্থ সংগ্রহ করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার থেকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এলক্ষ্যে আগামি ৩০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত আইপিওতে আবেদনের সময় নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে সোনালী লাইফের পরিচালক ও উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারে আনে ড্রাগণ সোয়েটার। এই কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ওইবছর ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যা ব্যবহারে অনিয়মের কারনে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করে কমিশন। যে কোম্পানিটি নিয়ে কিছুদিন আগে শ্রমিক অসন্তোষ এবং আন্দোলন হয়েছে।

অপরদিকে ২০১৩ সালে উচ্চ দরে (প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা) শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সোনালী লাইফের পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রাজিব সামদানির গোল্ডেন হার্ভেষ্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। ব্যবসায় উন্নতি করতে এই টাকা নিলেও ক্রমানয়ে তলানিতে কোম্পানিটি। যাতে আইপিওতে ২৫ টাকা ইস্যু মূল্যের শেয়ারটি এখন ১৪.৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

দফায় দফায় ঋণ পরিশোধ করতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা এই গোল্ডেন হার্ভেষ্ট থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে নিয়মিত বিনাসুদে অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সুদের উপর ঋণ নিয়ে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানি বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। যে কারনে পরিচালকদের কোম্পানির সুদজনিত ব্যয় না হলেও তালিকাভুক্ত গোল্ডেন হার্ভেষ্টের হয়েছে। যার দায়ভার বহন করতে হচ্ছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির সকল শেয়ারহোল্ডারদেরকে।

গোল্ডেন হার্ভেষ্ট শেয়ারবাজার থেকে প্রথম দফায় ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অর্থ সংগ্রহ করে। আর দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এই অর্থ সংগ্রহের ১ বছর পার না হতেই কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয়।

ড্রাগণ সোয়েটার ও গোল্ডেন হার্ভেস্টের এমন ব্যর্থতার পরেও কোম্পানি দুটির পরিচালকদের সোনালী লাইফকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কোম্পানিটির উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন ড্রাগণ সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিংয়ের পরিচালক সাফিয়া সোবহান চৌধুরী, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও গোল্ডেন হার্ভেষ্ট অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রাজিব সামদানি।

এছাড়া শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন ড্রাগন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, চেয়ারম্যান মোস্তফা কামরুস সোবহান ও পরিচালক তাসনিয়া কামরুন অনিকা। এমনকি ড্রাগণ সোয়েটারের পরিচালক তাসনিয়া কামরুন অনিকার স্বামী মীর রাশেদ বিন আমান সোনালি লাইফের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এমনকি সোনালী লাইফের হেড অফিস ড্রাগণ সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিবাগের ভবনে। যার ৮৩০০ স্কয়ার ফিটের অফিসের ভাড়া গুণতে হয় মাসিক ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা।

শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে যাওয়া সোনালী লাইফে শেয়ারধারনেও এগিয়ে রয়েছে ড্রাগণ সোয়েটারের পরিচালকেরা। বীমা কোম্পানিটিতে ড্রাগণ সোয়েটারের ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার শেয়ারধারন রয়েছে ৯.৯৪ শতাংশ। এছাড়া মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ৯.৪০ শতাংশ, সাফিয়া সোবহান চৌধুরীরর ৭.৪৭ শতাংশ, তাসনিয়া কামরুন অনিকার ৪.২১ শতাংশ, আহমেদ রাজীব সামদানির ৩.৬১ শতাংশ ও মোস্তফা কামরুস সোবহানের ১.০৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোম্পানির সচিবের সাথে বার বার টেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব নয়। তবে কোম্পানির সচিব একবার ফোন রিসিভ করলেও বলেন যা বলার থাকে ইমেল করেন। কিন্তু ইমেইলে কোন মতামত পাওয়া যায়নি।