শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। তবে গত এক মাসের অস্থিরতা বাজার থেকে স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের দিকে হাঁটছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা হলেও আতঙ্ক কাটছে।

বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে নিজস্ব বিনিয়োগের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদানের রেশিও বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার নিয়ে নতুন করে আস্থা ফিরতে শুরু করে। এর ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি বাড়ছে। বাজারের এ গতি চলমান থাকলেও বাজারবিমুখ বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবে।

এদিকে দুই ঘণ্টার হিসেবে লেনদেন ব্যাপক বেড়েছে। এর ফলে লকডাউনের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার খুব ইতিবাচক অবস্থায় কেটেছে বিনিয়োগকারীদের। সাত দিনের লকডাউনে পুঁজিবাজারের লেনদেন হচ্ছে দুই ঘণ্টা করে। লকডাউনের আগের দিন রোববার সূচক ১৮১ পয়েন্ট পতন হয়। মঙ্গলবার সেই সূচক উদ্ধারের পাশাপাশি আরও বেড়েছে।

আগের দিনের তুলনায় এদিন সূচক বেড়েছে ১০৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার। গত দুই দিনে কম যাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরেও ছিল উত্থান। একই সঙ্গে লেনদেনের হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারে ছিল দর বৃদ্ধির ছোঁয়া।

এছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার সিএএসপিআই ২৯৭ দশমিক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৬১ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১২টির। দর পাল্টায়নি ৩০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাস মহামরি বেড়ে যাওয়ায় মার্চ মাস থেকেই গুঞ্জন ছিল পুঁজিবাজারে বন্ধ হবে লেনদেন। তার প্রভাবে সূচক ও লেনদেনে ছিল নেতিবাচক অবস্থা। এর মধ্যে সরকারও স্বাস্থ্যবিধি-সম্পর্কিত ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। তারপরই আরও প্রকট হয় সেই আতঙ্ক।

পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে গেলে আটকে যাবে বিনিয়োগ। আর মার্জিন ঋণ নেয়া বিনিয়োগকারীরা পড়বেন সুদের ফাঁদে। এমন বিষয়টি যখন আলোচনায় তখন নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে আসে সাধারণ বিনিয়োগকারী, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সরতে শুরু করে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে দেয়া হয় সাত দিনের লকডাউন।

শনিবার ঘোষণা দিয়ে সোমবার থেকে সরকার লকডাউন কার্যকর করে। সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে রোববার। এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হলে সূচকের পতন হয় ১৮১ পয়েন্ট। লকডাউন ঘোষণার দিন থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে বলা হচ্ছিল, লকডাউনে বন্ধ হচ্ছে না পুঁজিবাজারের লেনদেন। ব্যাংকের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে চালু রাখা হবে লেনদেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এক কর্মশালায় রোববার বলেছিলেন, পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ হবে না। লেনদেনে যেসব শেয়ার বিক্রি হচ্ছে তা মূলত আতঙ্কিত হয়ে। তিনি আতঙ্ক না ছড়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আহ্বান জানান। এরপর সন্ধ্যায় ব্যাংকের লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে লকডাউন সময়কালে পুঁজিবাজারের লেনদেন দুই ঘণ্টা করে নির্ধারণ করা হয়। প্রথম দিনে লেনদেনে ৮৮ পয়েন্ট বেড়েছিল সূচক। আর লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ঘুরে উল্লম্ফনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াল দ্বিতীয় দিনেই।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘এত দিন যে শেয়ার বিক্রি হয়েছে তার ছিল প্যানিক সেল। আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছে। এখন পুঁজিবাজারে ভালো থাকায় আস্থা ফিরে এসেছে।’ ‘বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে ভুলে শেয়ার কিনে তা ভুলেই বিক্রি করে। যখন কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে তখন অন্যের কথা শোনে বা নিজের ইচ্ছায় শেয়ার কিনে। ‘কিন্তু যখন শেয়ারের দর কমতে থাকে তখন আবার বিক্রি করে বের হয়ে যায়। এখানে লাভ হলো, কী লস হলো সেটা বিবেচনা করে না।’

তিনি বলেন, ‘শেয়ার কিনে-বিক্রি করে বিশ্বের কোথাও কোন বিনিয়োগকারী কোটিপতি হয়নি। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বলে, তারা শেয়ার বাজারে ব্যবসা করে। ব্যবসা মানে তো কেনা-বিক্রি করা। ‘কিন্ত শেয়ারবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা। ব্যবসা করতে গেলেই লোকসান হবে।