শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার বন্ধ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার বন্ধের জোর দাবী জানিয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বাজার পরিস্থিতিতে বন্ধ না হলে শতকরা ৯০ শতকরা বিনিয়োগকারীর পুঁজি শুন্য হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সৃদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি বাড়ায় পুঁজিবাজারে বড় ধস নেমেছে। ফলে গত এক সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বড় ধস নামছে। টানা বড় পতনে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অব্যাহত পতনে তলানিতে নামা পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে স্টেকহোল্ডাররা এখন উদ্বিগ্ন। এই পতনের শেষ কোথায় এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্যই করছে না।

২০১৯ সালজুড়ে চলা মন্দাবস্থা কাটিয়ে তুলতে প্রত্যেকটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ফেব্রুয়ারিতে সার্কুলার জারির পর তহবিল গঠনের পর্যায়ে রয়েছে ব্যাংকগুলো। তফসিলি সব ব্যাংক তহবিল গঠন করলে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা তারল্য আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সরকারি নির্দেশনা ও ব্যাংকের বিশেষ তহবিল গঠনের মধ্যে দেশে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। মন্দাবস্থায় থাকা পুঁজিবাজারকে জাগিয়ে তুলতে সব মহলের চেষ্টার মধ্যে করোনা আঘাতে পর্যুদস্ত হয়েছে বাজার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার শঙ্কায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী দেদার শেয়ার বিক্রি করছে। এই অবস্থায় বড় বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় হওয়ার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করে নিরাপদ অবস্থান খুঁজছে। আর কেনার চেয়ে শেয়ারের দাম কম হওয়ায় মূলধন খোয়াচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে পুঁজিবাজার নিয়ে স্টেকহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সবার মনেই একই প্রশ্ন এই পতনের শেষ কোথায়?

গত ৮ মার্চ থেকে দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতন হচ্ছে। যাতে সর্বশেষ ৮ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৮১ পয়েন্ট বা ১৮ শতাংশ। এরমধ্যে ৯ মার্চ রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট বা ৬.৫২ শতাংশ পড়েছিল। এমন পতনের দিনেই শেয়ারবাজার বন্ধ করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন উঠে। কিন্তু ডিএসই সেদিকে এগোয়নি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) উদ্যোগ নেয়নি।

বিনিয়োগকারীরা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারবাজার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ সপ্তাহ বন্ধ রাখার জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকার্সসহ বিভিন্ন বোদ্ধারাও ভিতরে ভিতরে বাজার বন্ধ করা যৌক্তিক বলে আলোচনা করছেন। এ নিয়ে ডিএসইর ম্যানেজমেন্টও আলোচনা করেছে।

কিন্তু বন্ধ করার জন্য কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাজার বন্ধ করার দায় ডিএসই এককভাবে নিতে চাচ্ছে না। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা প্রত্যাশা করছে। কিন্তু বাজার যেহেতু ডিএসই পরিচালনা করে, তাই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে বলে কমিশনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।

গত ৯ মার্চ ডিএসইর বড় ধসের পরে লেনদেন বন্ধ করা নিয়ে চারদিকে গুঞ্জন উঠে। তবে ওইদিন ডিএসই জানায়, তারা লেনদেন বন্ধ করার বিষয়ে ভাবছে না। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দাবি, লেনদেন বন্ধ রাখার এখতিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের। তাদেরকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ বিষয়ে কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জকে কোন দিকনির্দেশনা দেবে না।

করোনা আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংকগুলো ২০০ কোটি টাকা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে, এমন ইতিবাচক ঘোষণার পরেও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের শেষ পুঁজিটুকুও চলে যেতে বসেছে।

এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। বুধবার সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক এ তথ্য জানান।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ কাজে আসছে না। ধারাবাহিক পতন অব্যাহত রয়েছে। ধারাবাহিক পতনের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ পতনে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। দিন দিন এভাবে পতন হওয়ায় পুঁজিবাজার ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌছেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের শেষ পুঁজিটুকুও চলে যেতে বসেছে। এমতাবস্থায় কমপক্ষে ১৫ দিন পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইকে দাবি জানিয়েছি। অন্যথায় এর দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলাকে ২০০ কোটি টাকা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুয়োগ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে না আসায় পুঁজিবাজারে দরপতন রোধ করা যাচ্ছে না। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা আর্তনাত করছেন। এদিকে সারা বিশ্বের মতোই আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারের লেনদেন সাময়িক বন্ধ রাখা উচিত।

এর আগে গত ১৬ মার্চ (সোমবার) বিকালে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ রাখার বিষয়ে মতামত জানান সংগঠনটির নেতারা। এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি এ কে এম মিজানুর রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির, যুগ সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল হক, মশিউর রহমান বিপ্লব, আন্তর্জাতিক সম্পাদক আতাউল্লাহ নাইম, কার্যকরী সদস্য মো. মামুন হোসেন শামীম, মোহাম্মদ ইসতিয়াকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফিলিপাইনে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন। গতকাল (১৭ মার্চ) থেকে দেশটির শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ আছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। কয়েক দিন আগে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতনের জেরে আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানের শেয়ারবাজার সাময়িক লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমেরিকায় ১৫ মিনিট, ভারতে ৪৫ মিনিট এবং পাকিস্তানে ৪৫ মিটি বন্ধ করা হয়েছিল শেয়ার কেনাবেচা।