শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে এবার ৫ হাজার কোটি টাকার আবর্তক তহবিল চেয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। গত ৯ ডিসেম্বর সংস্থাটির এমডি আবুল হোসেন এই তহবিল চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। পুঁজিবাজারে গুজব ঠেকাতে একটি ‘জনসংযোগ পরামর্শক’ পদ সৃষ্টি ও তা জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এ ধরনের উদ্যোগে কোনো কাজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এর আগে স্বল্প সুদে দুই হাজার কোটি টাকা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইসিবি। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, পুঁজিবাজারের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং আইসিবির সক্ষমতার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে ওই ঋণ দরকার। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন,বাজার ঠিক রাখতে গিয়ে নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে না পারা এবং উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করায় আইসিবির সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

সে জন্যই তাদের দুই হাজার কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদে ঋণ দরকার, যার ৭০ শতাংশ পুঁজিবাজারে শেয়ার কিনতে বিনিয়োগ করা হবে আর বাকি ৩০ শতাংশ ব্যয় হবে উচ্চ সুদে গৃহীত ঋণ ও সুদ পরিশোধে। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির সার্বিক তত্ত¡াবধান ও সহায়তায় আবর্তকশীল এই তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলটি পরিচালিত হবে আইসিবির ব্যবস্থাপনায়। তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটের লেনদেনের গতিশীলতা ধরে রাখতে ব্যবহৃত হবে।

জনসংযোগ পরামর্শক চায় বিএসইসি : গত ১০ ডিসেম্বর বিএসইসি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে জনসংযোগ পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান-পতন বিদ্যমান আছে। বাজারে নানা ধরনের গুজব রটনার প্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় গণমাধ্যমে কমিশনের মতামত তুলে ধরার জন্য একজন জনসংযোগ পরামর্শক দরকার। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে জনসংযোগ কর্মকর্তার পদ বিদ্যমান আছে, যা কমিশনের চাকরিবিধির তফসিলে নেই।

এসব উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, এসব তহবিল দিয়ে কোনো কাজ হবে না। কারণ পুঁজিবাজারে টাকার সংকট নেই। বিনিয়োগকারীরা টাকা নিয়ে বসে আছেন। আস্থার সংকট রয়েছে। সে কারণে সরকারের উচিত হবে আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা। আর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শীর্ষ পদে যারা আছেন তাদের পরিবর্তন জরুরি। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে যে সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা প্রয়োজন মতো দাম কমায়, বাড়ায় সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এগুলো না করে জনসংযোগ পরামর্শক নিয়োগ আর হাজার কোটি টাকার তহবিল দিলেও পুঁজিবাজারের কোনো কাজেই আসবে না।