শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস’র বিরুদ্ধে প্লেসমেন্টের নামে অনৈতিক বাণিজ্যর অভিযোগ উঠেছে। জেনেক্স ইনফোসিস বিনিয়োগ করেছে কিন্তু জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের প্রসপেক্টাসের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারবাজারের বাইরে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়াতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্লেসমেন্টের নামে অনৈতিক বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্লেসমেন্টের শেয়ার বরাদ্দের নামে চলেছে জমজমাট বাণিজ্য।

আর সেই বাণিজ্য পুরোটাই দখল করে রেখেছে কোম্পানির পরিচালকগণ ও উদ্যোক্তারা। কোম্পানির শেয়ার মূল্য যখন কয়েকগুণ ঠিক তখন সুযোগ বুঝে কোম্পানির পরিচালকগণ হাতিয়ে নিচ্ছে প্লেসমেন্ট শেয়ারের নামে কোটি কোটি টাকা। ঠিক সেই সুযোগের অপেক্ষায় জেনেক্স ইনফোসিস’র পরিচালকগণ। নিজেদের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে রেখেছেন প্রায় ১৭ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার।

গত বছর ০৪ সেপ্টেম্বর জেনেক্স ইনফোসিস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায়। জেনেক্স ইনফোসিস শেয়ারবাজারে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ টাকা। বর্তমানে প্রতিটি শেয়ারের দর চলছে ৫৬.৯০ টাকা। যে শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা তা হঠাৎ এত অতিরঞ্জিত উচ্চ মূল্যে লেনদেন ভাবাচ্ছে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেনেক্স ইনফোসিসে প্লেসমেন্ট শেয়ার লক ফ্রি হবে আগামী ৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। অথচ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড এ প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যেমন: ওরাক্যাল সার্ভিস লিমিটেড, আইপিই ক্যাপিটাল লিমিটেড, কোএজেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড ইত্যাদি কোম্পানীগুলোকে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জেনেক্স ইনফোসিস’র বিনিয়োগ করেছে কিন্তু জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের প্রসপেক্টাসের ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিজেদের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে রেখেছেন প্রায় ১৭ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার। বর্তমানে সে শেয়ারের মূল্য প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। জেনেক্স ইনফোসিস’র প্রসপেক্টাসে তথ্য অনুযায়ী কো এজেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ঠিকানা ১১৮/৫,বাংলাদেশ জুট রিচার্জ স্টাফ কোয়ার্টার মানিকমিয়া এভিনিউ ঢাকা। কোন স্টাফ কোয়ার্টারে প্রাইভেট কোম্পানি থাকবে না এরকম সাধারন জ্ঞান সবাই আছে। তবুও যেতে হয় অনুসন্ধানে। কো এজেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ঠিকানা অনুযায়ী প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখতে পায় ১১৮/৫ একটি পরিবার বসবাস করছে। আশেপাশের বসবাস করে এমন কয়েকজন ব্যক্তি জানান এখানে এই নামের কোন কোম্পানি নেই, এটা স্টাফ কোয়ার্টার এখানে সবাই পরিবার নিয়ে বসবাস করে।

১১৮/৫ ফ্যামিলি বাসা ৎলংপ-তে নিবন্ধিত: কো এজেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানিটির রেজিস্টার নাম্বার -১০৭৭৮৭। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় তাহলে কি জেনেক্সের পরিচালকগণ ৎলংপ-তে কো এজেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানিটিকে নিবন্ধ করেছে শুধু মাত্র জেনেক্সের প্লেসমেন্ট শেয়ার হোল্ড করার জন্য। কার্যক্রমবিহীন কোম্পানিটির নামে আছে প্রায় ৭ কোটি টাকার শেয়ার। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের প্রসপেক্টাসে তথ্য অনুযায়ী ওরাক্যাল সার্ভিস লিমিটেডের ঠিকানা সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার , ফ্লোর ১১,প্লট ৮৯, রোড ২৮,সেক্টর ৭ উত্তরা ঢাকা ১২৩০।

সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার , ফ্লোর ১১ তে ড্যাফোডিলস গ্রুপ। উক্ত ঠিকানা অনুযায়ী ওরাক্যাল সার্ভিস লিমিটেডকে খুঁজে পাওয়া না গেলে প্রতিবেদক সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টারের মালিক সমিতিতে যোগাযোগ করে। মালিক সমিতিতে গত চার বছর যাবত কাজ করেন মো. আইয়ুব হোসেন। তিনি আমাদের প্রতিবেদকে জানান, ওরাক্যাল সার্ভিস লিমিটেড নামে কোন প্রতিষ্ঠান সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টারে নেই। এক দুই বছর আগে ছিল কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আইয়ুব হোসেন জানান আগেও ছিল না এই নামের কোন প্রতিষ্ঠান।

সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার , ফ্লোর ১১ তে ড্যাফোডিলস গ্রুপ: ৎলংপ তে নিবন্ধিত ওরাক্যাল সার্ভিস লিমিটেড কোম্পানিটির রেজিস্টার নাম্বার ৭৮৭২৮। কার্যক্রমবিহীন কোম্পানিটির নামে আছে ৬ কোটি টাকার শেয়ার। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। বোঝাই যাচ্ছে এ যেন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য করার জন্য। জেনেক্স ইনফোসিস কোম্পানির পরিচালকগণ যে পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিজেদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের নামে হোল্ড করেছেন তাতে আরো কয়েকটা জেনেক্স ইনফোসিস তৈরি করা যাবে।

সবারই জানা আছে কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য একাধিক জুয়াড়িচক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে সক্রিয় রয়েছে। এদের প্রতিনিধিরা ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে গুজব ছড়ায়। এতে আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট ঐ কোম্পানির শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে শেয়ারটির দর বেড়ে গেলে জুয়াড়িরা তাদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেয়।

আর এরপরই ওই শেয়ারের দর টানা কমতে থাকে। ফলে শেষ পর্যন্ত লোকসান দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতের শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। এদিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস। বর্তমান প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ৫৬.৯০ টাকা। নামমাত্র অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসা জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার মূল্য আকাশ ছোঁয়া। অন্যদিকে জেনেক্স ইনফোসিসের পরিচালকগণদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠান নামে আছে বিপুল পরিমাণে প্লেসমেন্ট শেয়ার। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম