শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে না ফিরতে শেয়ার বিক্রির সুযোগ নিচ্ছেন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা। দীর্ঘদিন পর বাজারে নতুন বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে থাকা পত্রকোষে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। এর মধ্যেই উদ্যোক্তা পরিচালকদের আবারও শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। শুধু বোনাস শেয়ার নয়, অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের পত্রকোষে থেকেও টাকা তুলতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্লক মার্কেটে আবার কেউ ঢাকা স্টক একচেঞ্জের মাধ্যমে বিক্রি করবেন। এতে বাজার থেকে বের হয়ে যাবে বিপুল পরিমাণ টাকা।

এদিকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা পুঁজিবাজারের জন্য নতুন করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তারা আরো বলেন, বাজার একটু স্থিতিশীল যেতে না যেতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। যা পুঁজিবাজারের জন্য অশনি সংকেত। উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারের গতি নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাজার বিশ্লেষণে ডিএসই সুত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক একেএম শাহেদ রেজা’র ধারণকৃত ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯ হাজার ২৩টি শেয়ার থেকে ২০ লাখ শেয়ার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ এক মাসের মধ্যে দু’বারে ১৭ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের করপোরেট পরিচালক ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজের ধারণকৃত ২৫ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার থেকে ৮ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের করপোরেট পরিচালক ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের ধারণ করা ৪৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৪টি শেয়ার থেকে ৩৬ হাজার ২৪টি শেয়ার, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক তসলিমা ইসলামের ধারণ করা ২১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৭টি শেয়ার থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার শেয়ার,

এক্সিম ব্যাংকের উদ্যোক্তা মাজাকাত হারুন কোম্পানির ধারণকৃত ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৬ হাজার ১১৬টি শেয়ার থেকে ২৫ লাখ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের উদ্যোক্তা আবদুস সালাম এক মাসের মধ্যে দু’বারে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৪টি শেয়ার, একই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা প্রকৌশলী এম আবু তাহের তার ধারণকৃত ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৩টি শেয়ার থেকে ২৭ হাজার ৪৯৭টি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

ডিএসই’র তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার দুই কোম্পানির উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এসেছে। এর মধ্যে একটি এনসিসি ব্যাংক, অন্যটি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন। এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নূরুচ্ছাফা মজুমদার (বাবু) তার ধারণকৃত ১১ লাখ ২০ হাজার শেয়ার থেকে ২ লাখ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (ইউপিজিডিসিএল) কর্পোরেট পরিচালক ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেডের নিকট কোম্পানিটির ৪৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৪টি শেয়ার রয়েছে।

এসব ধারণকৃত শেয়ার থেকে ১ কোটি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৩০ কার্যদিবসে বাজার দর অনুযায়ী এসব শেয়ার বিক্রি করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুধু এই দুই কোম্পানির নয়, গত এক মাসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন মন্দা পরিস্থিতির পর বাজার কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এ বাজারে উদ্যোক্তাদের বড় ধরনের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেও উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির কারণে স্বাভাবিক গতিশীল বাজারে মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা ও তারল্য সংকট রয়েছে। এর মধ্যেও স্পন্সর ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বেড়ে গেছে। উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে মূলধন তুলছেন আর বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়লেও চাহিদা কম রয়েছে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, অনেক কোম্পানির শেয়ারে লক ইন ফ্রি হচ্ছে। এতে বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়ছে কিন্তু চাহিদা বাড়ছে না। সম্প্রতি পর্ষদ সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার কিছুটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উত্তরণে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।