শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দুর্বল মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটি চক্র। ফলে মৌলভিত্তির শেয়ার উপেক্ষা করে দুর্বল মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। কিছুদিন বাড়ার পর আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরপতন হচ্ছে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সবই ছোট মূলধনের সর্বস্ব কোম্পানি।

এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই প্রভাবিত করা যায়। যে কারণে চক্রটি কারসাজি করতে ছোট মূলধনের দুর্বল কোম্পানিগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব কারণে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়টি শনাক্ত করতে পেরে দুর্বল কোম্পানির কারসাজি বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এদিকে টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড। যেন এই ফান্ডে একটি ইউনিট কিনলেও মিলছে টাকা। কি আছে এই ফান্ডের মধ্যে। এই নিয়ে টানা ১৮ দিন সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ফান্ডটির। তবুও ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে আসেনি। ফান্ডটির কোন বিক্রেতাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ১৮ কার্যদিবসে ফান্ডটির দর বেড়েছে ৩৪.৪০ টাকা। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রায় ৩১০ গুণের বেশি। সিন্ডিকেট লেনদেনের কারণে আকাশচুম্বী এই দর না টিকলে ক্ষতিতে পড়বেন বিনিয়োগকারী।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি মাসের ২ তারিখে ফান্ডটির মূল্য ছিল ১০ টাকা। বৃহস্পতিবারে লেনদেন শেষে ফান্ডটির প্রতিটির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৪.৪০ টাকা। এই দিনে ফান্ডটির তিন হাজার ৬২৩টি ইউনিটের লেনদেন হয়। গত ১৫ জুলাই ফান্ডটির মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ১০ জুলাই ফান্ডটির ৩ লাখ ৪০ হাজার ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এদিকে ফান্ডটির দর ১৮ কার্যদিবসে ৩১০’ শতাংশের ওপর বাড়লেও নিশ্চুপ ডিএসই। অন্য কোম্পানির দর ১০ শতাংশ বাড়লেই ডিএসইর পক্ষ থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে চিঠি পাঠিয়ে বিনিয়োগকারীর তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু এই ফান্ডের বিষয়ে উদাসীন ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ফান্ডটি পরিশোধিত মূলধন ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫১.৪১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৮.৪৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ১৫ শতাংশ ইউনিট রয়েছে।

জানা গেছে, ফান্ডটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। ফান্ডটি সর্বশেষ ৪৪ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এদিন ফান্ডটি ১৭ বারে ৩ হাজার ৬২৩টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ১৬ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা এসইএমএল লেকচার ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এদিন ফান্ডটি সর্বশেষ ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। ফান্ডটি ৭৩৪ বারে ৩২ লাখ ৪৯ হাজার শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ৪ কোটি ৪ লাখ টাকা।

তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডটির ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এসইএমএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ডটির ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউজুয়াল ফান্ডটির ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। একটি ফান্ডের সঙ্গে সঙ্গে আরও ফান্ডের দর বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।

বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিনে লোকসানে থাকার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে নেই। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অর্থাৎ ফান্ড ম্যানেজার একে অপরের ফান্ডে বিনিয়োগ করে অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি চেষ্টা করছেন। দাম বাড়ছে দেখে অনেক বিনিয়োগকারীই লোভে ফান্ডে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের আটকা পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।

২০১৯ সালে আইপিওতে আসা এই ফান্ডটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সামান্যই বিনিয়োগ করেছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে মোট দশমিক ১৫ শতাংশ ইউনিট রয়েছে। সবাই এটিরই সুযোগ নিচ্ছেন। প্রতিদিনই ১০ শতাংশ করে বাড়তে বাড়তে একজন না একজন তো সর্বোচ্চ শিখরে আটকা পড়বেন। তখন এই ফান্ড তিনি কার কাছে বিনিয়োগ করবেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নইলে মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হবেন, সেটি তাদের জন্য অপূরণীয় লোকসান নিয়ে আসবে।