পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থার জন্য দায়ী ফ্লোর প্রাইস: ডিএসই এমডি
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বর্তমানে যে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে তার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস (প্রতিটি সিকিউরিটিজের সর্বনিম্ন দাম) দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া সরাসরি দামের ওপর হস্তক্ষেপ করা। আইন অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এটা করতে পারে না। দামের ওপর হস্তক্ষেপ করা পৃথিবীর কোথাও নেই। মঙ্গলবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। সিএমজেএফের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি জিয়াউর রহমান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী এটি সঞ্চালনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই এমডি বলেন, ফ্লোর প্রাইস কোনো সমাধান না। এটা শেয়ার প্রাইস নির্ধারণে সরাসরি হস্তক্ষেপ। রেগুলেটর বা স্টক এক্সচেঞ্জ কেউ প্রাইস ফিক্স (নির্ধারণ করে দেওয়া) করতে পারে না, এটা আমাদের অর্ডিনেন্সে বলা আছে। দামে হস্তক্ষেপ করা পৃথিবীর কোথাও নেই। স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাইস ডিসকভারের জায়গা। সুতরাং ফ্লোর প্রাইস কোনো সমাধান নয়।
তিনি বলেন, মার্কেট এখন খারাপ। লেনদেনের ভলিউম কম। অনেকে ব্লক হয়ে আছেন। তারা কোনো সেল করতে পারছেন না, ক্রেতাও পাচ্ছেন না। সবাই জানে এটা নিয়ম না। অবশ্যই এখন বাজারের এই অবস্থার জন্য এটা (ফ্লোর প্রাইস) একটি কারণ। এরসঙ্গে আন্তর্জাতিক কিছু ইস্যুও আছে। আমি কখনোই ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে না। এটা যদি চালু করার আগে আমাকে বলতো আমি বলতাম ‘না’।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই এমডি বলেন, আইপিও যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত। আগে এক্সচেঞ্জের ভালো ভূমিকা ছিল, এখন অনেকটাই কম। বর্তমানে আইপিওসহ সব ধরনের পাবলিক অফারের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। কোথাও স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমোদন দেয়, আবার কোথাও রেগুলেটর অনুমোদন দেয়। আমাদের দেশে আগে থেকেই রেগুলেটর আইপিও অনুমোদন দিয়ে আসছে।
বিএসইসি’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ডিএসইর বর্তমান অবস্থার নানান দিক এবং এর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে পুঁজিবাজারের ম্যানিপুলেশন বন্ধ, ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেন, কৌশলগত বিনিয়োগ ও টেকনিক্যাল সহায়তা, ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা, বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানান বিষয় উঠে আসে।
এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালইজেশন করা হয়। এ আইনে স্বতন্ত্র পরিচালকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ট্রেক হোল্ডারদের প্রতিনিধিও রয়েছে। তবে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে, কিছু বিষয় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সেটা নিয়ে রেগুলেটরের সঙ্গে আলোচনা করবো আমরা।
ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জে বেশ কিছু সুফলও এসেছে। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা হয়েছে। সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপে নেই। অপারেশনে বোর্ডের কোনো ইনফ্লুয়েন্স নেই। তবে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে, বলেন ডিএসই এমডি।
ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবে টেকনিক্যাল কিছু প্রস্তাব ছিল। সে প্রস্তাবের কিছু কাজ এরই মধ্যে হয়েছে। আরও কিছু বাকি রয়েছে। করোনার কারণে বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। আশা করি অবশিষ্ট কাজও হবে।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে লাভ-লোকসান থাকবেই। কারো লোকসান হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হয়, বিনিয়োগকারীর টাকা যাতে কেউ আত্মসাৎ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি।
৩৬ বছর ধরে ডিএসই’র একই অডিটর দিয়ে নিরীক্ষা করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টিতে আমি অবাক হয়েছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে অডিটর রোটেশনে জোর দেওয়া হয়। কারণ রোটেশন না করলে অডিটর নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে অডিটর প্রভাবিত হতে পারেন। কারণ অডিটিং হচ্ছে সুশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পুঁজিবাজারে ম্যানুপুলেশন বন্ধে ডিএসই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে শেয়ার কারসাজি নিয়ে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অনেক তদন্তই ডিএসই করার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। কারসাজি নিয়ন্ত্রণে ডিএসই’র সার্ভিলেন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, কারসাজি বন্ধ ও গভীর অনুসন্ধানে ডিএসই’র আরও ক্ষমতা প্রয়োজন। বিশেষ করে কারখানা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরি। কারণ কারসাজি ভালোভাবে ডিগ-আউট করতে ডিএসই তথ্য চাইলে, কেউ নাও দিতে পারে। না দিলে কিন্তু বাধ্য করা বা ব্যবস্থা নেওয়ার মতো এখতিয়ার আমাদের নেই, যা বিএসইসি’র আছে।
দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চয়ই দেখেশুনে আইপিও অনুমোদন করে। আর বিএসইসি অনুমোদন করলে সেটি তালিকাভুক্ত করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, বাজারের উন্নয়নে আইন-কানুনের কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন প্রয়োজন। এগুলো আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তুলে ধরবো। বিএসইসি বাজারের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছে। তাই আইনের পরিবর্তন ও সংশোধনের বিষয়ে তারা ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলে আশা করছি।