generation-nextশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেডের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালাবে। কমিশন মনে করছে, আয় অতিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে অবচয় ব্যয় বাদ দেয়ার জন্য আর্থিক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কিছু সম্পদ গোপন করেছে কোম্পানিটি। এজন্য বিএসইসির সর্বশেষ নিয়মিত সভায় কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএসইসি সূত্র জানায়, বিশেষ নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এ কাশেম অ্যান্ড কোম্পানিকে মনোনীত করেছে কমিশন। সর্বশেষ শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালিয়েছিল বিএসইসি। এর পর শাহজিবাজার পাওয়ারের পরিচালকদের জরিমানা করা হয়।

জেনারেশন নেক্সটের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রকদের আশঙ্কা, আয় বাড়িয়ে দেখানোর বাইরে কোম্পানিটি বিদ্যমান প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়েছে এবং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস। সে সময় ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুরোটাই ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যয় করে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে তালিকাভুক্তির দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়।

২০১৪ সালে তিনটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে দুটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে বাজার থেকে ১১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। রাইট অফার ডকুমেন্টে এ অর্থের মধ্যে ৪৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ব্যাংকঋণ পরিশোধ এবং বিদ্যমান প্রকল্প সংস্কার ও আধুনিকায়নে (বিএমআরই) ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের ঘোষণা দেয় কোম্পানি। রাইট শেয়ারের অর্থ প্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে বিএমআরইর কাজ সম্পন্ন করারও ঘোষণা আসে।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনসের চলমান মূলধনি কর্মযজ্ঞে ১০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে সম্পদের বিবরণীতে বিপুল এ বিনিয়োগের যথাযথ প্রতিফলন নেই বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রকরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হিসাব মান অনুযায়ী অবচয় সুবিধার বিপরীতে যথাযথ ব্যয় ধার্য করা হলে জেনারেশন নেক্সটের আয় প্রদর্শিত আয়ের চেয়ে কমে যাবে। আয় বাড়িয়ে দেখানোর উদ্দেশ্যেই কোম্পানিটি অবচয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।

২০১৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেনারেশন নেক্সটের কর-পরবর্তী মুনাফা হয় ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। এ বছর সার্বজনীন হিসাব বছর অনুসরণ করায় এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেনি।

তবে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ৩৩ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা কম। এদিকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জেনারেশন নেক্সটের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৩৭১ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৫৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ২৭ ও বাকি ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

শেয়ারবাজারে আসার পর প্রতি বছরই শেয়ারহোল্ডারদের অন্যূন ১৫ শতাংশ হারে স্টক লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুই বছরের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে জেনারেশন নেক্সট শেয়ারের দর ১৮ থেকে ৬ টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গতকাল সর্বশেষ লেনদেন হয় ৬ টাকা ৭০ পয়সায়।