mutual fund lagoপ্রশান্ত কুন্ডু, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে ছিল। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বিনিয়োগকারীরা ছিল হতাশ। দীর্ঘদিন পরে অন্য খাতগুলোতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও দীর্ঘ ৭ বছরেও সুদিন ফেরেনি মিউচুয়াল ফান্ডে বরং দিন দিন এই খাতের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে।

তবে বাজারে নানা গুজব রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করছেন এমন খবরে এ শেয়ারের দর বাড়ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এছাড়া অধিকাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের বড় একটি অংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

তাছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডে ফেসভ্যালুর নিচে থাকায় বিনিয়োগ করছেন বলে এমন কিছু উড়ো খবর রয়েছে।  প্রতিনিয়ত কমছে তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর ইউনিটের দর। বর্তমানে এসব ফান্ডের মধ্যে অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে ৩১টি ফান্ডের ইউনিটের দর।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর রয়েছে সপ্তম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের। ফান্ডটির ইউনিট দর ১১২.৭০ টাকা। আর সবচেয়ে কম ৪.২ টাকায় অবস্থান করছে পিএইচপি মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৬ শতাংশ বা ৩১টির ইউনিট দর অবস্থান করছে অভিহিত মূল্যের নিচে।

muchal fundএ রকম মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হচ্ছে, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু, গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এআইবিএল প্রথম ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটের দরে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়ায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। বেশ কিছুদিন ধরে সিংহভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমলেও এর আগের কার্যদিবসগুলোতে বেশিরভাগ ইউনিটের দর ইতিবাচক থাকায় আবারো আলোচনায় এসেছে এ খাতটি।

muchalসুত্র মতে, ফান্ডগুলো নগদ লভ্যাংশ দেবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন খবর রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা এর কোনো সত্যতা দিতে পারেননি। বৃহস্পতিবার মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আলোচনায় মগ্ন রয়েছেন। তাদের মধ্যে গুজব রয়েছে যে, ফান্ডগুলো নগদ লভ্যাংশ দেবে। তবে ইউনিট ম্যাচিউরড হয়ে যাওয়ায় অনেক হোল্ডাররা ইউনিট বিক্রি করে লভ্যাংশ তুলে নিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৬ শতাংশ বা ৩১টির ইউনিট দর অবস্থান করছে অভিহিত মূল্যের নিচে। এ রকম মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো হচ্ছে- এআইবিএল প্রথম ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড,

এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু, গ্রিন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এই তালিকায় আরো রয়েছে রিলায়েন্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স একইভাবে আইসিবি দ্বিতীয় এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি তৃতীয় এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় মিউচ্যুয়াল ফান্ড,

আইসিবি এমপ্ল¬য়িজ প্রভিডেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড। অন্যান্য ফান্ডের মধ্যে রয়েছে এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পিএইচপি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এছাড়া আইসিবি এএমসিএল সোনালি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, এলআর গ্লোবাল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও এনসিসি ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান এই তালিকায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর রয়েছে সপ্তম আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের। ফান্ডটির ইউনিট দর ১১৩.৮০ টাকা। আর সবচেয়ে কম ৪.৮০ টাকায় অবস্থান করছে আইসিবি ৩য় এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটের দরে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়ায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন মিউচুয়াল ফান্ডগুলো শেয়ারের করুন অবস্থা ছিল। তবে ফান্ডগুলো নগদ লভ্যাংশ দেবে এমন কোন খবর আমার জানা নেই। তবে দীর্ঘদিন থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থা বেশি ভালো নয়। আমি মনে করি এসব ফান্ডে বিনিয়োগ করেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন। কারণ ইউনিটগুলোর দর এখন হাতের নাগালে রয়েছে। তবে এর জন্য বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য থাকতে হবে।

একই বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, লিখিত কোন সিদ্ধান্ত না হলে আমরা কোন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলতে পারি না। এর আগে বিষয়টিকে কিছুতেই খবর বলা যায় না। পুঁজিবাজারে গুজব ছড়ানোর লোকের অভাব নেই। বিনিয়োগকারীদের সেদিকে নজর দেয়া দরকার।

অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা জানান, মূলত বাজার ভালো না থাকায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। যে কারণে পুঁজি ফেরৎ পেতে তাদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও ইউনিটগুলোর দর বাড়ায় তারা কিছুটা আশাবাদী। বিনিয়োগকারীদের অভিমত ফান্ডগুলোর অবস্থা ভালো হলে আমরা পুঁজি ফেরত পাবো।

আফজাল  নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু দীর্ঘকাল থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো নয়। যে কারণে ফান্ডগুলো ভালো করতে পারছে না। ফলে ফান্ডগুলোর প্রতি আমাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আমার মতো আরো হাজারো বিনিয়োগকারীর অর্থ আটকে রয়েছে।