facevalloপ্রশান্ত কুন্ডু, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। গত এক মাস ধরে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার আভাস দিলেও ৬৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়েনি। ফলে এসব কোম্পানির প্রতি দিন দিন বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

তবে মানুষের দৈনন্দিক ব্যবহারে বিশুদ্ধ পানি ও কনডেন্সড দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রপ্তানিমুখী কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রি মেঘনা গ্রুপ ফ্রেশ পানি, ফ্রেশ কনডেন্সড মিল্ক, ফ্রেশ ক্রিম, পামওয়েল, ভেজিটেবল অয়েল ও ফ্রেশ চা মানুষের চাহিদার বড় অংশই মেটায়।

বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়লেও পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত এই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রির শেয়ার বছরজুড়েই অভিহিত মূল্যের নিচে। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে। কোনো লভ্যাংশ পায়নি বিনিয়োগকারীরা। ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত কম্পানিটি জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৬৮টি কম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। মৌল ভিত্তির কম্পানি বিবেচিত কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারও রয়েছে অভিহিত মূল্যের নিচে। এসব কম্পানির মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড শীর্ষে। এই খাতের ৩৫টি কম্পানির মধ্যে ২৯টি ফান্ডের ইউনিট অভিহিত মূল্যের নিচে।

বস্ত্র খাতের ৪৫টির মধ্যে অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে ১০টি শেয়ার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টির মধ্যে আটটি, ব্যাংক খাতের ৩০টির মধ্যে সাতটি, ইনস্যুরেন্স দুটি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ একটি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক পাঁচটি, প্রকৌশল একটি, ওষুধ ও রসায়ন দুটি, কাগজ ও মুদ্রণ একটি, সিরামিক একটি এবং ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের একটি কম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। আর এসব কম্পানির বেশির ভাগ শেয়ার গ্রাহকই সাধারণ বিনিয়োগকারী।

কম্পানিগুলোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর আর্থিক প্রতিবেদন বেশ সমৃদ্ধই ছিল। বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশও দিয়েছে। কয়েক বছর আর্থিক প্রতিবেদন নেতিবাচক হওয়ায় এসব কম্পানির শেয়ারে ভাটা পড়েছে। কোনো লভ্যাংশ না পেয়ে শেয়ার থেকে দূরে সরছে বিনিয়োগকারীরা। অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা কম্পানিগুলোর লেনদেনও কম হচ্ছে। লভ্যাংশ না দিতে পারলে পুঁজিবাজারে কোনো কম্পানিকে ‘জেড‘ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়। লভ্যাংশ প্রদানের ভিত্তিতে ক্যাটাগরিও পরিবর্তিত হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে, তালিকাভুক্তির শুরুতে কম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ভালো থাকলেও পরবর্তী সময়ে কমছে। কম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ভালো বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরাও লভ্যাংশের আশায় সেদিকে ছুটে যায়। শেয়ারের চাহিদাও বেশি থাকে।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে কম্পানি কৌশল অবলম্বন করে আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসান দেখায়। যেন বিনিয়োগকারীকে কোনো লভ্যাংশ দিতে না হয়। আবার সত্যিকার অর্থেই কোনো কোনো কম্পানির ক্ষতিও হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারী যেন ক্ষতিতে না পড়ে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানির শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা বাজারে ভালো লক্ষণ নয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় শেয়ার দাম অতি মূল্যায়নের ফল এটি। সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে দাম নির্ধারিত না হওয়ায় শেয়ার দাম কমে যায়।

গত ১৭ জুলাই ইভিন্স টেক্সটাইলের লেনদেন শুরু হয়েছে। ওই দিন ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত কম্পানিটির শেয়ার দাম সর্বোচ্চ ২৪ টাকায় লেনদেন হয়। ১৫ কার্যদিবস লেনদেনে কম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ১৫.১ টাকায়। তালিকাভুক্তির দ্বিতীয় দিনেই লুজারের শীর্ষে ওঠে কম্পানিটি। এখনো ধারাবাহিকভাবেই কমছে শেয়ার দাম।

বিনিয়োগকারীরা বলছে, পুঁজিবাজারে মৌল ভিত্তির কম্পানিকে আনা প্রয়োজন। শুরুতে কম্পানি বাজারে আসার অনুমোদন পেতে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখায়। আসার পর শেয়ারের চাহিদা বেশি দেখালে প্রতিবেদন খারাপ হওয়া শুরু করে। লভ্যাংশ দিতে চায় না। যার দরুণ প্রত্যাশা নিয়ে কেনা শেয়ারে ক্ষতিতে পড়তে হয়।

বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘মৌল ভিত্তির কয়েকটি কম্পানিও অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। শেয়ার দাম অতি মূল্যায়িত হওয়ায় এসব কম্পানির শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের নিচে। তালিকাভুক্তির সময় শেয়ারের যথাযথ দাম নির্ধারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের পকেটের টাকা নেওয়ার জন্য যত ধরনের ফন্দি আছে তার সবই করছে শেয়ারবাজারের নীতিনির্ধারণী মহল। একবার টাকা উঠিয়ে নিতে পারলে আর বিনিয়োগকারীদের কথা তাদের মনে থাকে না।

সাধারণ মানুষের টাকায় বাড়ি-গাড়ী সবই করে। কিন্তু কোম্পানির শেয়ার দর কেথায় গেল তার আর খবর রাখে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও যেনো তাদেরই কেনা গোলাম। দর বাড়লে ব্যবস্থা নেয়, আর কমলে কোনো কথা নাই। আসলে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হলাম বলির পাঠা। এসব বিষয়ের সুরাহ দরকার বলে মনে করেন তিনি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)  এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের নীচে নামলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো কিছু করনীয় নেই। এ বিষয়ে ডিএসই বা সিএসই চাইলে পদক্ষেপ নিতে পারে। আর কোন কিছু অস্বাভাবিক দেখলে তারা তা আমাদেরকে জানাবে। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু সরাসরি এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না।