dividentsশহিদুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিগুলো। আইপিওর সময় তারা বলে থাকে যে উত্তোলিত অর্থে কোম্পানির মূলধন বাড়ানোসহ অন্যান্য উন্নয়মূলক কাজে ব্যবহার করা হবে। কিন্ত বাস্তবে অনেক কোম্পানিই তা করেনা। তারা আইপিওর অর্থ ব্যবহূত না করেই শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে বাড়িয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে কোম্পানগুলোর কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। কোম্পানির এহেন আচরনকে কারসাজির নতুন পন্থা বলা চলে। কারণ বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হলে কোম্পানি থেকে কোনো ধরনের ক্যাশ আউট ফ্লো হয় না। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হলে ক্যাশ আউট ফ্লো হয়। মূলত সমূদয় আয়ই কোম্পানিতে রেখে দেওয়ার কৌশল হিসেবে বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে কোম্পানিগুলো।

এতে কোম্পানির মূলধন বাড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে হারে কোম্পানিগুলোর আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় না। এতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ও সম্পদমূল্য কমে যায় এবং ভবিষ্যতে কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাও কমে যায় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে মূলধন বাড়াচ্ছে ঠিকই। তবে এতে ব্যবসায় উন্নতি হয় না। স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরের বছর গিয়ে কোম্পানিগুলোর ইপিএস কমে যায়। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা লোকসানের কবলে পড়েন। তাই আইপিওর টাকা ব্যবহার না হতে বোনাস শেয়ার প্রদানে নিষেধাজ্ঞা অথবা উদ্যোক্তাদের বোনাস শেয়ার বিক্রয়ে লক ইন চালু করা প্রয়োজন।

জানা যায়, আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে যেসব কোম্পানির মূলধন বাড়ানো হয়েছে  সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল, আমান ফিড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, শাশা ডেনিমস, ইফাদ অটোস।

রিজেন্ট টেক্সটাইল : আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি পুজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্র্রহ করে। ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই টাকা পায়। প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিটি এই টাকা ১৮ মাসে ব্যবহার করবে। কিন্তু কোম্পানিটি সেই টাকা ব্যবহার না করতেই সাড়ে চার মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দেয়।

অলিম্পিক এক্সেসরিজ : মেশিনারিজ ক্রয়, ভবন নির্মাণ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকা দরে ২ কোটি শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু কোম্পানিটিও আইপিওর অর্থ ব্যবহার না করেই তিন মাস না যেতেই ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের ঘোষণা দেয়।

তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ : কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে গত বছরের ১৭ জুন অনুমোদন পায়। সংগৃহীত অর্থ ১৪ মাসের মধ্যে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু কোম্পানিটি সেই টাকা ব্যবহার না করতেই ১৭ জুন ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের ঘোষণা দেয়।

আমান ফিড : কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৭২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে কোম্পানিটি এই টাকা উত্তোলন করে। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই টাকা ব্যবহারের জন্য ১৫ মাস সময় নেয়। কিন্তু দুই মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দেয়।

শাশা ডেনিমস : ২০১৫ সালের ৫ মার্চ ১৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও আইপিও খাতে ১৮ মাসে ব্যয় করার অনুমতি নিলেও ১২ এপ্রিল ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের ঘোষণা দেয়।

ইফাদ অটোস : ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আইপিওর মাধ্যমে ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। ব্যবসায় সম্প্রসারণ, ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানায়। ১২ মাসের মধ্যে অর্থ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে ২৬ অক্টোবর ফের ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের ঘোষণা দেয়।